আধ্যাত্মিকতা আর বাস্তবজীবনের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখবেন কীভাবে?
আমাদের চারপাশের বস্তু, ঘটনা নিয়ে যে জীবন গড়ে ওঠে তা হল আমাদের বাস্তব জীবন। এই জীবনে আমাদের চারপাশের সবকিছুই প্রাধান্য পায় বেশি। অন্যদিকে আধ্যাত্মিক জীবন হল সেই জীবন যেখানে আমরা জীবনের অর্থ লক্ষ্য ও পথ খুঁজে থাকি। খোঁজ করি ঈশ্বরের কাছে। ত্যাগের মন্ত্র যেখানে মূলমন্ত্র। কিন্তু অনেকেই বাস্তব জীবনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন নিজের এই আধ্যাত্মিক জীবন। অনেকেই বেশি প্রশ্রয় দিয়ে ফেলেন এই আধ্যাত্মিকতাকে। ফলে বাস্তবচ্যুত হয়ে পড়েন সহজেই। আমাদের প্রত্যেকের কল্পনাতেই একটি আদর্শ জীবন থাকে। কিন্তু তার মধ্যে জীবনের ওঠাপড়াগুলো থাকে না। আমরাই আসলে রাখতে পছন্দ করি না। ফলে যে আধ্যাত্মিক জীবনে আমরা বাঁচতে চাই তা আর আমাদের নাগালে থাকে না । পিয়ের টেলিহার্ড বলেছেন, মানবশরীরে আধ্যাত্মিকর অভিজ্ঞতা কেউ নই, বরং আধ্যাত্মিক শরীরে মানুষের অভিজ্ঞতা লাভ করি। কথাটা ঠিকই। আর এই কথাতেই লুকিয়ে আছে কীভাবে নিজের আধ্যাত্মিক জীবন ও বাস্তব জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখা সম্ভব।

১। আধ্যাত্মিক জীবনে বাস্তবকে জায়গা দিন
কঠিন বাস্তবকে আমরা মানতে চাই না। বাস্তবের যা কিছু বিপদ ও খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে ও হতে পারে, সবকিছুকেই বাদ দিতে চাই জীবন থেকে। আমাদের এই প্রবণতাই বাস্তব থেকে আমাদের দূরে ঠেলে দেয়। ফলে কোনও পরাজয় বা আকস্মিক ঘটনাকে আমরা মেনে নিতে পারি না, ভেঙে পড়ি সহজেই। হারতে বসি জীবনে। এখন থেকে এমনটা আর নয়। যে আধ্যাত্মিক জীবনকে নিজে সাজাচ্ছি তাতে জায়গা দিতে হবে বাস্তবকেও। ভগবানের পাশাপাশি বাস্তব থাকলেই ভগবানের থেকে আপনার প্রয়োজনীয় উত্তরগুলো পাবেন। কারণ ঘটমান বর্তমানকে ভুলে জীবনসংকটের উত্তর খোঁজা অসম্ভব।

২। বাস্তবকে মেনে নিন
আধ্যাত্মিক জীবন মানুষকে যতই উদ্বুদ্ধ করুক না কেন, মানুষ কিন্তু শিক্ষালাভ করে বাস্তব থেকেই। পিয়ের উপরের কথাটা বলেছিলেন কারণ মানুষ এক অদ্বিতীয় প্রাণী। মানুষ একমাত্র উন্নতমানের চিন্তা করতে পারে, নিজেকে নিজের ইচ্ছার দিকে ও বিপরীতে সমানভাবে চালিত করতে পারে। তাই আপনাকে বাস্তবের সব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। খারাপ বা ভালো যাই হোক, তার কার্যকারণ ও ফল খতিয়ে দেখতে হবে। বুঝতে হবে নিজের দোষ থাকলে তা ঠিক কোথায়। তবেই তো সেই দোষগুলো শুধরোনোর উপায় খুঁজবেন আধ্যাত্মিক জগতের মধ্যে ! আধ্যাত্মিক জগত আপনাকে তবেই বাস্তবসম্মত উত্তর দিতে পারবে। আর যথাযথ সমাধান পেলে তবেই তো আপনি এই আধ্যাত্মিক জগতের মাধ্যমে নিজের উন্নতিসাধন করতে পারবেন। এভাবেই একমাত্রদুই জীবনকে এক শরীরে এক মস্তিস্কে জায়গা দেওয়া সম্ভব। এতে কারও সঙ্গে কারও বিরোধও হয় না। আর যতক্ষণ আপনি বস্তবকে মেনে নেবেন না, আধ্যাত্মিক জগতের কাছে উত্তর খুঁজবেন সবকিছুকেই নিজের কপাল দোষ ভেবে ততদিন কিন্তু আসল সমস্যা থেকেই যাবে। আধ্যাত্মিক ও বাস্তব জীবনের মধ্যে সমন্বয় সাধন হবে না।

৩। দুই জগতকে বেছে নিন দুইভাবে
আধ্যাত্মিক জগত আর বাস্তব জগত দুইই যে আপনার সুস্থ, সুখী জীবনের জন্য জরুরি তা তো উপরের আলোচনায় স্পষ্ট। এবারে প্রশ্ন হল কীভাবে এদের জীবনে সাজাবেন। কীভাবে সাজালে জীবনের লক্ষ্য নড়চড় হবে না যতই বাধাবিপত্তি আসুক না কেন। বাস্তব জীবনকে মনে করুন হাতে কলমে শিক্ষার জীবন আর আধ্যাত্মিক জীবন থেকে উপদেশ গ্রহণ করুন উন্নততর ভবিষ্যতের জন্য। বাস্তব জীবন আপনাকে ঠেকে শেখাবে, আর আধ্যাত্মিক জীবন এই বাধাবিপত্তি এড়িয়ে কীভাবে আপনাকে ভবিষ্যতের দিকে এগোতে হয় তা বলে দেবে।
দিনের দুই আলাদা সময়ে দুই জগতে যদি এভাবে বাস করতে পারেন, দেখবেন এই দুই জগত কখনই পরস্পরবিরোধী নয়, বরং একে অন্যের পরিপূরক।